BDC বাংলা News: Kazi Sobur: কাইচাইল,নগরকান্দা, ফরিদপুর। Date:30,06.2025
এক সময় ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার কাইচাইল বিল ছিল মাছের জন্য প্রসিদ্ধ। প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠা দেশি মাছ যেমন—রুই, কাতলা, মৃগেল, কৈ, ট্যাংরা, পাবদা—এই বিলেই মিলত। বর্ষা মৌসুমে পানিতে ভরপুর কাইচাইল বিল হয়ে উঠত মাছ ধরার উৎসবমুখর এক অঞ্চল। স্থানীয়রা নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত মাছ বাজারে বিক্রি করত, যা কম দামে সাধারণ মানুষ কিনে খেতে পারত।
কিন্তু এখন সেই দৃশ্য শুধু স্মৃতিতে। কাইচাইল বিলের মাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এর পেছনে অন্যতম কারণ হলো নিষিদ্ধ চায়না জালের অবাধ ব্যবহার। এই পাতলা, সূক্ষ্ম ফাঁসযুক্ত জালটি পানিতে থাকা সব ধরণের মাছ, এমনকি ডিম ও পোনাও আটকে ফেলে। ফলে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
চায়না জালের ভয়াবহতাঃ
বিশেষজ্ঞদের মতে, চায়না জাল অত্যন্ত ক্ষতিকর কারণ—
এটি পানি থেকে সব আকারের মাছ, এমনকি নতুন জন্ম নেয়া পোনাও ধরে ফেলে।
মাছের প্রাকৃতিক আবাস ও খাদ্যচক্রে ব্যাঘাত ঘটায়।
দীর্ঘমেয়াদে বিলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে যায়।
এছাড়া এই জাল ব্যবহারের ফলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী অল্প সময়ে বেশি লাভ করতে গিয়ে পুরো বিল ও জলজ পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে।
সামাজিক দায় ও সচেতনতার অভাবঃ
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অনেকেই জানেন না এই জাল ব্যবহারের আইনগত নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে। কেউ কেউ জানলেও লাভের আশায় তা অগ্রাহ্য করছেন। অথচ মৎস্য অধিদপ্তর থেকে বহুবার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে, এমনকি স্থানীয় প্রশাসনও অভিযান চালিয়েছে।
প্রতিকার ও করণীয়ঃ
মৎস্য বিশেষজ্ঞ এবং পরিবেশবাদীদের মতে, কাইচাইল বিল ও এর মাছ রক্ষায় নিতে হবে নিন্মোক্ত কার্যকর উদ্যোগ:
1. চায়না জালের বিরুদ্ধে কঠোর আইন প্রয়োগ:
নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করে জব্দ ও ধ্বংস করতে হবে নিষিদ্ধ জাল।
2. স্থানীয় জনগণকে সচেতন করা:
গ্রামে গ্রামে প্রচারণা চালিয়ে এই জালের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরা জরুরি।
3. প্রাকৃতিক মাছ প্রজনন পুনরুদ্ধার:
সরকারিভাবে বিলগুলোতে দেশি মাছের পোনা অবমুক্ত করা এবং প্রজনন মৌসুমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।
4. মৎস্যজীবীদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থান:
যারা মাছ ধরা পেশায় যুক্ত, তাদের প্রশিক্ষণ ও সহায়তা দিয়ে অন্য পেশায় যুক্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।
উপসংহার:
কাইচাইল বিল শুধু একটি জলাশয় নয়, এটি ছিল এই অঞ্চলের ঐতিহ্য ও জীবিকার অংশ। এখনই কার্যকর ব্যবস্থা না নিলে, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হয়তো জানতেই পারবে না এই বিলের গল্প। তাই সবাইকে সচেতন হতে হবে, যাতে আবারও কাইচাইল বিল ফিরে পায় তার হারানো প্রাণ।

Comments
Post a Comment
Thanks For Comment